ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে কিভাবে বাড়াবেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আমরা সবাই জানি, সাস্থ্যই সম্পদ। আর সাস্থ্য হানি মানে বাড়ে দুশ্চিন্তা এবং কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে যখন তখন বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমনের কারণ অনেকে আবার বুঝতে পারেন না।
নিজের প্রতি যত্নশীল হলে, অনেক ধরনের বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব। শরীরে সঠিক পরিমাণে পুষ্টির অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আপনি যদি প্রায়ই অসুখে ভোগেন তবে বুঝতে হবে আপনার দে’হে প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে বেশ কিছু কিছু লক্ষণের দ্বারা তা প্রকাশ পায়। সেই লক্ষণগুলি হল.......
শিশুদের লক্ষণ:
১. এক বছরের মধ্যে চার বা তার চেয়ে বেশী বার কানে ইনফেকশন হওয়া।
২. এক বছরের মধ্যে দুই বা তার চেয়ে বেশী বার সাইনাসের সমস্যা হওয়া।
৩. দু মাস বা তার বেশী সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরও কাজ না করা।
৪. এক বছরের মধ্যে দুই বা তার বেশী বার নিউমোনিয়া হওয়া।
৫. বার বার চামড়ার গভীরে বা দেহের ভেতরে ক্ষত বা পুঁজ জমা।
৬. শিশুর ওজন এবং শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে না হওয়া।
৭. মুখের ঘা বা ত্বকের ছত্রাক ঘটিত রোগ সহজে ভালো না হওয়া।
৮. জীবানু ঘটিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য বার বার অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন নেওয়ার দরকার হয়।
বড়দের লক্ষণ
১. এক বছরের মধ্যে চার বা তার চেয়ে বেশী বার কানে ইনফেকশন হওয়া।
২. এক বছরের মধ্যে দুই বা তার চেয়ে বেশী বার সাইনাসের সমস্যা হওয়া।
৩. প্রতি বছর অন্তত একবার নিউমোনিয়া হওয়া।
৪. দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
৫. বার বার ভাইরাসের আক্রান্ত যেমন সর্দিকাশি, হার্পিস ইত্যাদি।
৬. রোগ থেকে মুক্তির জন্য বার বার অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগের প্রয়োজন হওয়া।
৭. বার বার চামড়ার গভীরে বা দেহের ভেতরে ক্ষত বা পুঁজ জমা।
৮. মুখের ঘা, ত্বক বা অন্যান্য স্থানের ছত্রাক ঘটিত রোগ সহজে ভালো না হওয়া
এছাড়া ও আরও কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে কোন দুটি বা তার বেশী লক্ষণ দেখতে পেলে দেরী না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। আসলে আমাদের অসুস্থ হওয়ার মূল কারণ, সঠিক পরিমাণে পুষ্টির অভাব। আর, এই পুষ্টির অভাব বা ঘাটতি হয় মূলত সঠিক খাদ্যাভ্যাস না থাকলে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেভাবে বাড়াবেন –
১) প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন। প্রোটিন আমাদের দেহের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। বিভিন্ন রোগ আটকাতে প্রোটিনের জুড়ি নেই। শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়াতেও প্রোটিন বেশ কার্যকরী। ডিম, মুরগীর মাংস, সামুদ্রিক মাছ ও বিভিন্ন প্রকার ডালে রয়েছে ভালো মানের প্রোটিন। তাই আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমন্বিত খাদ্য রাখুন।
২) ভিটামিন সি দেহের ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে বেশ কার্যকরী। এটি মানব শরীরের জন্য অনেক জরুরি একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। যা আমাদের দাতেঁর গোঁড়া শক্ত করতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ও বয়সের ছাপ লুকাতে সাহায্য করে।
৩) জিঙ্ক শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষমতা হ্রাস পেলে দেহের ইমিউন সিস্টেমে কমে যায়। দৈনিক খাদ্যতালিকায় কাঠ বাদাম, চীনাবাদাম, কাজু বাদাম, শিমের বিচি, দুধ, মাখন ও পনির রাখলে জিঙ্কের অভাব পূরণ হয়।
৪) ভিটামিন বি-১২ দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন বি-১২ বেশ কার্যকরি। এর পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। দুগ্ধজাত খাদ্যে ও ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিতামিন বি-১২ রয়েছে।
৫) সামান্য ব্যায়াম, যোগাসন ও ধ্যানের মাধ্যমেও ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করতে না পারলে রোজ ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। এতেও আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়া নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, পরিমিত ঘুম মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনবে আপনার জন্য। মনে রাখবেন সুস্থ থাকার জন্য হাসিখুশি থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ ও মানসিক চাপ এড়িয়ে বাড়িয়ে ফেলুন আপনার দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।